কিভাবে একটি মিটিংকে সফল বানাবেন।। Tips for Successful Meeting in Bangla

কিভাবে একটি মিটিংকে সফল বানাবেন।। Tips for Successful Meeting in Bangla

কিভাবে একটি মিটিংকে সফল বানাবেন।। Tips for Successful Meeting in Bangla

মিটিং হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আমরা আমাদের সহকর্মী, আমাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, অথবা আমাদের ব্যবসায়ীক পার্টনারদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। সেইসাথে একটি মিটিংয়ের দ্বারা আমরা চাইলে আমাদের ব্যক্তিগত অথবা প্রাতিষ্ঠানিক যে কোন লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হতে পারি। সুতরাং মিটিং হচ্ছে আমাদের প্রফেশনাল লাইফে লক্ষ্য অর্জনে প্রধান হাতিয়ার বা উপকরণ।  


আমরা তখনই কোন একটি মিটিং এর মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে পারব বা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো, যখন আমরা সেই মিটিংকে সফলভাবে  সম্পন্ন করতে পারবো। তাই আমাদের  প্রফেশনাল লাইফে সফলতা অর্জনের জন্য মিটিং এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 


আজকে আমরা জানবো কিভাবে একটি মিটিং সফল করতে হয়।  তবে তার আগে আমরা জেনে নিব, কি কি কারণে একটি মিটিং থেকে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে আমরা ব্যর্থ হই। নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্য আমাদের প্রফেশনাল লাইফের মিটিংগুলো ফলপ্রসূ হয় না। তবে যে কারণগুলো আজকে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।


আমরা আমাদের প্রফেশনাল লাইফে মিটিং থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও পেতে পারি যদি সেই মিটিং এর বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে, টেকনিক্যাল বিভিন্ন সেটআপে সমস্যা থাকলে, যেখানে মিটিং হচ্ছে সেখানের আশেপাশের পরিবেশ খারাপ হলে। সেইসাথে মিটিং এ অংশগ্রহণকারীর কোয়ালিটি, যথেষ্ট বিনোদনের অভাব,  অতিরিক্ত ঠাট্টা, অনভিজ্ঞ বক্তা এবং যিনি সভাপতিত্ব করছেন তার অনভিজ্ঞতার কারণে একটি প্রফেশনাল মিটিং ব্যর্থ হতে পারে। 


মিটিং মূলত পাঁচ প্রকারের  হয়ে থাকে যেমন ইনফরমেশন মিটিং, ডিসিশন মেকিং মিটিং, ইনস্ট্রাকশন মিটিং, মোটিভেশন মিটিং এবং সোশ্যাল  মিটিং। প্রতিটি প্রকার মিটিং এর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে আজকে আমরা সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে,  মিটিং যে প্রকারেই হোক না কেন সেই মিটিংকে  কিভাবে সফল করা যায়।  


অহেতুক মিটিংয়ের আয়োজন না করাঃ 

কোন একটি মিটিং আয়োজন করার উদ্দেশ্য যদি এমন হয় যে, মিটিং করাটা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের রুটিন তাই মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে, তাহলে সেই ধরনের মিটিং থেকে কোন ধরনের ফলাফল আশা করা ঠিক না। 


মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে যদি প্রতিষ্ঠান বা নিজের গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য আদান-প্রদান করার  প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে সেই ধরনের মিটিংয়ের আয়োজন করা কখনই উচিত না। সুতরাং মিটিং মানে তারজন্য  কোন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে হবে, কোন মেসেজ প্রদান করার প্রয়োজন থাকতে হবে বা কোন ইনফরমেশন আদান-প্রদানের প্রয়োজন থাকতে হবে। 


মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তুতির সুযোগ প্রদানঃ 

মিটিংয়ে যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদেরকে পূর্ব থেকে যদি মিটিং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়,  মিটিং এর ধরন কি রকম সে ব্যাপারে যদি ধারণা দেয়া হয় অর্থাৎ উক্ত মিটিংয়ে শুধু কি বক্তা তার বক্তব্যই উপস্থাপন করবেন নাকি সেখানে উপস্থিত সকল বক্তা এবং শ্রোতাদের মধ্যে মত বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে, তাহলে সেই মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী পূর্ব থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারবে।   


সেইসাথে মিটিংয়ে আরো কারা অংশগ্রহণ করছেন বা আরো কোন কোন বক্তাদেরকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, মিটিং এর অবস্থান কোন জায়গায় ইত্যাদি বিষয়ে যখন কোন মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীকে পুর্ব থেকে ইনফরমেশন দেয়া হয় তখন সেই ব্যক্তি উক্ত মিটিং এর জন্য নিজেকে পারফেক্ট করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। 


আর যখন মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী নিজেকেই পারফেক্ট করে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিবে, তখনই একটি মিটিং হবে পারফেক্ট এবং সফল। কারণ তখন কোয়ালিটিফুল বক্তা এবং কোয়ালিটিফুল শ্রোতার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।


মিটিং শুরুর পূর্বে মিটিং এর স্থান পরিদর্শন করাঃ  

মিটিং এর আয়োজন যারা করেছেন বা মিটিং এর বিভিন্ন প্রবলেম সলভিং এর জন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত মিটিং শুরু হওয়ার পূর্বে মিটিংয়ের স্থান ভালভাবে পরিদর্শন করা। মিটিং-এর জন্য যে সেটআপ নির্ধারণ করা হয়েছে বা যে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে সেগুলো ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। 


কোন কারণে মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী বক্তা অথবা শ্রুতা মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন টেকনিক্যাল প্রবলেম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাব জনিত সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে সে ক্ষেত্রে বক্তব্য দেওয়া এবং বক্তব্য শোনা উভয় ক্ষেত্রে ইন্টারাপশন ঘটাতে পারে যা কখনোই একটি সফল মিটিং এর জন্য পজিটিভ দিক হতে পারেনা। 


যথা সময়ে মিটিং শুরু করাঃ 

মিটিংয়ে যারা অংশগ্রহণ করছেন তারা অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ রেখে উক্ত মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। মিটিংয়ে আগত ব্যক্তিদের মিটিং এর প্রতি আগ্রহ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য মিটিংয়ে থাকতে হবে পরিপূর্ণ ডিসিপ্লিন। 


অর্থাৎ মিটিংয়ে আমন্ত্রিত লোকদের মধ্যে যারা এখনো উপস্থিত হতে পারেননি তাদের জন্য অপেক্ষা না করে মিটিং যথাসময়ে শুরু করা উচিত। কোন বক্তা যদি মিটিং এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাহলে সেই বক্তা থেকে ভালো কোনো কিছু আশা করা ঠিক না। আবার যে সকল শ্রুতাগণ মিটিং এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সমস্যা তৈরী হবে না তাও আশা করা ঠিক না।


সকলের উপস্থিতির মূল্যায়ন করাঃ 

অংশগ্রহণকারীদের যদি কোনভাবে মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করার সময় তাদের উপস্থিতির মূল্যায়ন করা হয় অর্থাৎ তাদেরকে যদি সুন্দরভাবে অভ্যর্থনা দেয়া হয় বা ফুল দিয়ে স্বাগতম জানানো হয়, তবে সে ক্ষেত্রে সেই অংশগ্রহণকারী বক্তা হোক অথবা শ্রুতা হোক তাদের এই মূল্যায়নের কারণে যে কোন মিটিং সফলভাবে সম্পন্ন হতে পারে। 


সেই সাথে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রোতাদের মিটিং এর প্রতি এক্টিভ রাখার জন্য তাদের সকলকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে যদি সম্ভব হয় অথবা তাদেরকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে তাদের কাছ থেকে মতামত নিতে হবে। 


সকলের কম্ফোর্ট এর চিন্তা করাঃ 

আমাদের মন কিন্তু আমাদের দেহের মধ্যেই বাস করে সুতরাং আমাদের দেহ যদি কোন জায়গায় কমফোর্ট ফিল না করে, তাহলে সেখানে আমাদের মন ও অবস্থান করতে কমফোর্ট ফিল করে না। সুতরাং মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী সকলের কম্ফোর্টের কথা চিন্তা করে মিটিং রুমের তাপমাত্রা, বসার চেয়ার, মিটিং রুমের এর সাউন্ড সিস্টেম এসকল বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। 


সেইসাথে মিটিং যদি দীর্ঘসময়ের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিরতি বা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে করে আগত ব্যক্তিদের কেউই বিরক্তিভাব না প্রকাশ করেন। মানুষ মিটিংয়ে যখন নিজেকে কমফোর্ট ফিল করবে তখনই সে মিটিং এর প্রতি ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারবে এবং সেই মিটিংটি একটি সফল মিটিং এ রুপ নিবে। 


অংশগ্রহণকারীর ইশারা-ইঙ্গিতের দিকে খেয়াল রাখাঃ 

মানুষ কি চাচ্ছে বা না চাচ্ছে সেগুলো অনেক সময় মানুষের হাতের ইশারা, চোখের ভাব-ভঙ্গি বা মাথা দ্বারা ইশারা ইত্যাদি দ্বারা বুঝা যায়। সুতরাং আগত ব্যক্তিরা এরকম ইশারা-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে যে মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করছেন সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। 


নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রতি খেয়াল রাখাঃ

মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে আপনি নিজে কি করছেন সে বিষয়গুলো কিন্তু অন্যের জন্য একটি ইশারা বা সিগনাল হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকেন,  বারবার নিজের ঘড়ি দেখতে থাকেন, নিজের নখ পরিষ্কার হতে থাকেন অথবা পাশের জনের সাথে গল্প করতে থাকেন, তাহলে বিষয়টি এমন হল যে, আপনার সামনে যিনি কথা বলছেন তার কোন মূল্য আপনার কাছে নেই। 


সুতরাং মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যাতে অন্যরা আপনার ইশারা-ইঙ্গিত এর কারনে, আপনার আচার-আচরণের কারণে মিটিং এর প্রতি আগ্রহ না হারিয়ে ফেলে। 


নিজের বক্তব্যকে সুন্দর করে সাজানোঃ

আপনি যদি কোনো মিটিংয়ে একজন বক্তা হিসেবে  আমন্ত্রিত হন তাহলে আপনার প্রেজেন্টেশনকে এমনভাবে সাজান যাতে বক্তব্যের ভাষা সাবলীল হয়, ইনফরমেশন গুলো ক্লিয়ার হয়, প্রতিটা এক্সপ্রেশন গুলো যাতে এমন হয় যে মানুষের বুঝতে সমস্যা না হয়। 


সেইসাথে আপনার বক্তব্যকে এমন ভাবে গুছিয়ে আনেন যাতে বক্তব্যটি লম্বা কাহিনীর দিকে না গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত এবং বোধগম্য বক্তব্যে রূপ নেয়। কারণ আপনার সামনে যারা শ্রোতা আছেন তারা কেউই লম্বা ইতিহাস শোনার জন্য মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেননি, বরং তারা অল্প সময়ে সঠিক ইনফর্মেশন নেওয়ার জন্যই বেশি আগ্রহী।


যথাসময়ে মিটিং এর সমাপ্তি ঘোষণা করাঃ 

যথাসময়ে মিটিং সমাপ্ত করা মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি বিরাট উপহার স্বরূপ। কারণ আজকাল সবাই ব্যস্ত সময়ের মধ্যে দিন পার করেন। সুতরাং মিটিং এর জন্য যে সিডিউল আছে তার বাহিরে কোন সময় দীর্ঘায়িত করা যাবে না।  যদি সম্ভব হয় তাহলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে মিটিং এর সমাপ্তি ঘোষণা করা আরো ভালো। 


অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা অন্য কোন কাজ  ফেলে এসেছি এই তাড়াহুড়ায় যেন অংশগ্রহণকারীর মিটিং এর প্রতি আগ্রহ না হারিয়ে যায় তাই যথা সময়ে মিটিং এর সমাপ্তি ঘোষণা করতে হবে। মনে রাখা ভাল তাড়াহুড়ার মাধ্যমে কারো সাথে কোন ইনফরমেশন শেয়ার করা যায় না, কারো কাছ থেকে কোন মতামত নেওয়া যায় না, অথবা কাউকে কোন বিষয় বোঝানোও যায় না। 


সুতরাং কোন একটি মিটিংয়ে একে অন্যের সাথে কমিউনিকেশন যদি সফল ভাবে না করা যায় বা মত বিনিময় সফলভাবে না করা যায়, তাহলে সেই মিটিং থেকে কাঙ্খিত ফলাফল আশা করা যায় না। 


অতএব একটি মিটিং দামি কোন রিসোর্টে বা দামি কোন ফাইভ স্টার হোটেলে আয়োজন করলেই যে  সফল হবে তা নয়। আবার, হাসাতে পারেন এবং বিনোদন দিতে পারেন এরকম বক্তাকে দিয়েও কিন্তু  কোন মিটিং এর মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, যদি উপরোক্ত বিষয়গুলির প্রতি খেয়াল না রাখা হয়। 


আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পেরেছি কিভাবে একটি মিটিংকে সফল করতে হয়। আশা করছি ভবিষ্যতে কোনো মিটিং এর আয়োজন করলে বা কোন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করলে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রেখে আমরা কাজ করব যাতে একটি মিটিং সম্পন্ন করার পর সফলতা পেতে পারি।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url