ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য।। How to be a good speaker in Bangla

ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য।। How to be a good speaker in Bangla

ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য।। How to be a good speaker in Bangla

আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারেন বা বক্তব্য দিতে পারেন,  আবার অনেকে রয়েছেন যারা খুব সুন্দর কণ্ঠস্বরে ওয়াজ মাহফিলে কথা বলতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুন্দর করে কথা বলতে পারা বা সুন্দর কণ্ঠস্বরে ওয়াজ করতে পারার  মানে কি এটা ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য? 


প্রথমেই বলে রাখি যে, ভালো কথা বলতে পারা আর ভালো বক্তা একই জিনিস না।  ভালো বক্তা তিনি যার কথার দ্বারা উনার সামনের শ্রোতা প্রভাবিত হয় এবং সেই সাথে উনার সামনে  যেসকল  শ্রোতা রয়েছেন, তারাও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেসেজ সেই  বক্তা থেকে পেয়ে থাকেন। 


সুতরাং আজকে আমরা জানবো, একজন ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য কি কি।  একজন ভালো বক্তা, বক্তব্য দেওয়ার পূর্বে কি কি জিনিস বিবেচনা করেন। কি কি বিষয় পর্যালোচনা করে উনি বক্তব্য প্রদান করেন এবং সেই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে উনি সবার কাছে একজন ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।


একজন ভালো বক্তা তার বক্তব্য প্রদানের পূর্বে বা যে অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে নিম্নোক্ত যুক্তিসংগত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বক্তব্য প্রদান করেন বা  অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 


কেন আমাকেই আমন্ত্রিত করা হয়েছেঃ 

আপনি হয়তো আন্তর্জাতিকভাবে খুব একটা পরিচিত না, অথবা আপনি নিজ দেশের মধ্যেই খুব পরিচিত একজন ব্যক্তি না, তারপরও আপনাকে কোন অনুষ্ঠানে বা ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 


সুতরাং সেই অনুষ্ঠানে বা ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকেন,  কোন এমন জিনিস আপনার মধ্যে রয়েছে যার জন্য অনুষ্ঠানের কমিটি বা ওয়াজ মাহফিলের কমিটি আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।


আপনি যদি সেই কারণ খুঁজতে সক্ষম হন, তাহলে সে কারণই হতে পারে আপনার বক্তব্য দেওয়ার মূল বিষয়বস্তু। অতএব, নিজে থেকেই সেই কারণ খুঁজে বাহির করে নেওয়া এবং সেই কারণ এর উপর ভিত্তি করে নিজের বক্তব্য আগে থেকে গুছিয়ে আনাই হচ্ছে একজন ভালো বক্তার বৈশিষ্ট্য, যিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। 


মানুষ আমার থেকে কি আশা করছেঃ 

আপনাকে যে অনুষ্ঠানে বা যে ওয়াজ মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেই অনুষ্ঠানের আলোচনার বিষয়বস্তু যদি আপনার জ্ঞানের বাহিরে হয় অর্থাৎ যে বিষয়ের উপর আপনি আপনার নিজ জ্ঞান থেকে কথা বলতে সক্ষম না, সেইরকম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা মানে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না।


সুতরাং একজন ভালো বক্তা সব সময় খেয়াল রাখে যে, সে নিজে যে বিষয়ের উপর পূর্ণ জ্ঞান রাখে, সেই বিষয়ের উপর নির্ভর করে অনুষ্ঠান বা ওয়াজ মাহফিল পরিচালিত হচ্ছে কিনা। 


আমার বক্তব্যের শ্রোতা কারাঃ 

আপনার বক্তব্যের শ্রোতা কারা, সে বিষয়গুলো অনুষ্ঠানে বা ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই জেনে নেওয়া উচিত। কারণ শ্রোতার শ্রেণী অনুযায়ী বক্তব্যের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। 


আপনার শ্রোতা যদি আপনার অফিসের স্টাফ হয়, তাহলে বক্তব্য এক ধরনের হবে। আপনার  শ্রোতা যদি কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়, তাহলে বক্তব্যের ধরন অন্য রকম হবে। সেই সাথে আপনার বক্তব্যের শ্রুতা  যদি কোন সাধারণ পাবলিক হয় বা তারা কোন রাজনৈতিক দলের অনর্ভূক্ত হয়, তাহলে বক্তব্য হবে  আরেক ধরনের। 


এভাবে একজন সফল বক্তা অনুষ্ঠানে পৌঁছার পূর্বে তার শ্রোতার ধরন বা শ্রোতার শ্রেণি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে থাকেন, যাতে করে উনি যখন উনার বক্তব্য প্রদান করবেন তখন বক্তব্যটি যেন হয় শ্রুতার আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 


আপনি যখন শ্রোতার আগ্রহের কথা চিন্তা করে আপনার বক্তব্য প্রদান করবেন, তখন আপনার  বক্তব্যের প্রতিটি মেসেজ  আপনার শ্রোতাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে। 


অনুষ্ঠানে আমার সিডিউল কখনঃ 

প্রথমেই আপনাকে যে জিনিসটা জানতে হবে সেটা হচ্ছে আপনি যে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন, সেই অনুষ্ঠানে আপনি ছাড়া আর কে কে অংশগ্রহণ করছেন। সেইসাথে আমন্ত্রিত বাকি বক্তাদের মধ্যে আপনার বক্তব্য দেওয়ার সিডিউল কখন তা জেনে নেওয়া। 


আপনাকে পূর্ব থেকেই জেনে নিতে হবে যে, আপনার বক্তব্য কি দুপুরের আগে, সন্ধ্যার পরে, না কি রাত্রে ডিনারের পরে প্রদান করতে হবে। কারণ সময়ভেদে বক্তব্যের ধরন এবং বক্তব্যের দীর্ঘতা পরিবর্তন হতে পারে। 


সেইসাথে জেনে রাখা ভালো  যে, শ্রোতার শ্রেণি অথবা অনুষ্ঠানের ধরন ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে একটি অনুষ্ঠানের পুরো সময়ের মধ্যে কিছু সময় থাকবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিছু সময় থাকবে কম গুরুত্বপূর্ণ, আবার কিছু সময় থাকবে বিরক্তিকর।


উদাহরণস্বরূপঃ আপনি একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করলেন যেখানে আপনার বক্তব্যের শ্রোতা হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত রয়েছেন। উক্ত সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য এবং শ্রুতারা বক্তার কাছ থেকে মেসেজ গ্রহন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হয়েছে দুপুরের পূর্ব সময়।


দুপুরের আগের সময়ের গুরুত্ব শ্রোতার কাছে যেমন ছিল,  দুপুরের পরে সেই গুরুত্ব অবশ্যই থাকবে না, তখন মানুষ কারো বক্তব্য শোনার প্রতি আগ্রহী থাকবে না। আপনার বক্তব্য যদি মানুষ মন দিয়ে শুনতে না চায়, তাহলে সেই বক্তব্য কিভাবে মানুষকে প্রভাবিত করবে এবং কিভাবে আপনি একজন সফল বক্তা হবেন। 


সুতরাং একটি অনুষ্ঠানে আপনার বক্তব্য দেওয়ার জন্য সময় কখন নির্ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো যদি আগে থেকে জানা সম্ভব হয়, তাহলে সেই সময় বিবেচনা করে এবং সময় এর উপর নির্ভর করে গ্রাহকের আগ্রহের কথা চিন্তা করে বক্তব্যকে পূর্ব থেকে সাজানো সম্ভব হবে। 


মনে রাখবেন যে, একটি পূর্ব পরিকল্পিত বক্তব্য যদি সংক্ষিপ্তও হয় তারপরেও সেই বক্তব্য দ্বারা মানুষকে প্রভাবিত করা সম্ভব এবং মানুষের কাছে আপনি একজন সফল বক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করা সম্ভব। 


আমি কোথায় বক্তব্য দিবোঃ 

আপনি যে অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন,  সেই অনুষ্ঠানটি কোন জায়গায় হচ্ছে সে বিষয়ে আগে থেকে জানা জরুরী। অর্থাৎ, অনুষ্ঠানটি কোন সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, না কি কোন ওপেন স্পেস বা খালি মাঠে  হতে যাচ্ছে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ব থেকে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। 


কারণ সেমিনার হলে বক্তব্যের জন্য সেটআপ এবং খালি মাঠে  বক্তব্যের জন্য সেটআপ ভিন্ন হয়ে থাকে। সেই সাথে সেমিনার হলে যেসব বক্তারা সচরাচর বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাদের কথা বলার ধরন এবং খোলা মাঠে যে সকল বক্তারা সচরাচর বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাদের কথা বলার ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। 


উদাহরণস্বরূপঃ সেমিনার হলের  বক্তারা সাধারণত আস্তে আস্তে এবং গুছিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন,  অন্যদিকে খোলা মাঠে যে সকল অনুষ্ঠান হয়ে থাকে সেখানের বক্তারা সাধারণত তাদের সামনে থাকা শ্রুতাদের মনোযোগী করার জন্য উচ্চস্বরে কথা বলে থাকেন। 


সুতরাং আপনি কোন জায়গায় বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আগে থেকে জানা প্রয়োজন কারণ, আপনি যেখানে প্রাক্টিস করে অভ্যস্ত সেখানেই আপনি ভাল ফলাফল পাবেন, সেখানেই আপনি আপনার শ্রুতাদের প্রভাবিত করতে পারবেন এবং সেখানেই আপনি একজন শ্রোতার কাছে সফল বক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবেন।  


আমার বক্তব্য কতটুকু শ্রোতাবান্ধবঃ 

কোন অনুষ্ঠানে বা ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে নিজের বক্তব্যকে আগে থেকে গুছিয়ে নেওয়া উচিত। বক্তব্যকে এমনভাবে নোট করা যাতে বক্তব্যের মেইন পয়েন্ট গুলো লেখা থাকে। সেই পয়েন্টগুলোর আলোকে পরবর্তীতে আপনি বক্তব্য প্রদান করবেন। 


আপনি যখন আপনার খাতায় বা কোন নোটবুকে আপনার বক্তব্য সাজাচ্ছেন, তখন আপনার লেখা প্রতিটি ইনফর্মেশন যেন শুধু খাতার মধ্যেই সুন্দর হলে হবে না বরং এই ইনফর্মেশন গুলো যখন আপনার শ্রোতার কান দিয়ে ঢুকবে, তাদের কাছেও যেন সুন্দর হিসেবে বিবেচিত হয়। 


অর্থাৎ আপনি যদি একজন আইন বিশেষজ্ঞ হন এবং আপনার শ্রুতা যদি সাধারন মানুষ হয়, সেইসাথে আপনার বক্তব্যের বিষয়ও যদি আইন সম্পর্কৃত হয়, তাহলে আপনি বক্তব্য দেওয়ার সময় আপনার প্রফেশনাল ভাষা ব্যবহার করতে পারবেন না।  আপনি এমন একটি ভাষা ব্যবহার করতে হবে যা আপনার সকল শ্রুতার কাছে  বোধগম্য হয়। 


তাছাড়া,  আপনি কোন ইনফরমেশনকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে উপস্থাপন করতে পারবেন না। আপনার উচিত যত কম বাক্যে ইনফর্মেশন বা মেসেজ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় তার জন্য চেষ্টা করা। সেই সাথে একই বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা করা যাবে না। অর্থাৎ একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি যেন বক্তব্যের মধ্যে বারবার না ঘটে। 


সুতরাং আপনার বক্তব্যের ভাষা হবে সহজ, প্রতিটি বাক্য হবে যথাসম্ভব ছোট এবং কোন একটি বাক্য অযথা বারবার রিপিট হবে না। সেইসাথে আপনার বক্তব্যের জন্য অনুষ্ঠানে  যে সিডিউল রয়েছে তার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ আপনি যত দেরিতে আপনার বক্তব্য প্রদান করার সুযোগ পাবেন, আপনি আপনার বক্তব্য তত  সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করবেন।


সেইসাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হচ্ছে, তা হলো আপনার আই কন্টাক্ট। আপনি খেয়াল রাখবেন,  আপনি যখন কথা বলছেন তখন আপনার দৃষ্টি যেন শ্রোতাদের দিকেই থাকে। আপনি যদি কোন স্ক্রিপ্ট দেখে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে খেয়াল রাখবেন যখন আপনি স্ক্রিপ্ট পড়ছেন তখন যেন আপনি কথা না বলেন।


সেই সাথে যারা প্রজেক্টরের মাধ্যমে বা স্লাইডের মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন বা প্রেজেন্টেশন করছেন তাদের উচিত যখন তারা স্লাইড পড়ছেন তখন বক্তব্য না দেওয়া, কারণ আপনি যদি স্লাইড দেখা অবস্থায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তখন শ্রোতাদের মনোযোগ স্লাইডের  মধ্যে লেখার দিকে থাকবে এবং আপনার মুখের দ্বারা যে মেসেজ তাদেরকে দিচ্ছেন সেগুলোর প্রতি তাদের মনোযোগ  থাকবে না। 


কোনভাবেই যেন শ্রোতাদের মনোযোগ প্রজেক্টর এর স্ক্রিনের দিকে বা আপনার হাতের থাকা কোন লিখিত ডকুমেন্টস দিকে না যায়। শ্রোতারা যেন সর্বদা আপনার বক্তব্য এর  দিকেই যেন মনোযোগী হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। যখন শ্রুতা এবং আপনার মধ্যে কমিউনিকেশন সুন্দর হবে, তখন আপনার বক্তব্যের মধ্যে থাকা প্রতিটি ম্যাসেজ তাদেরকে প্রভাবিত করবে। আর এভাবে আপনি হতে পারেন একজন সফল বক্তা। 


উপরোক্ত সবগুলো বিষয়গুলো খেয়াল রেখে যদি আপনি আপনার পরবর্তী কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বক্তব্য মানুষকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে এবং আপনার এই বক্তব্য দ্বারা সবার কাছে আপনি জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবেন।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url