জব ইন্টারভিউতে আচরণ কেমন হওয়া উচিত তার দিকনির্দেশনা।। Job Interview Manner in Bangla

জব ইন্টারভিউতে আচরণ কেমন হওয়া উচিত তার দিকনির্দেশনা।। Job Interview Manner in Bangla

জব ইন্টারভিউতে আচরণ কেমন হওয়া উচিত তার দিকনির্দেশনা।। Job Interview Manner in Bangla

চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো আপনার পক্ষ থেকে সম্পাদিত হলে চাকরি না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, চাকরি শুধু অভিজ্ঞ লোকদেরই হয়ে থাকে বা যারা পড়াশোনায় মেধাবী তাদের চাকরি হয়ে থাকে। 

বাস্তবে ইন্টারভিউইয়ার অনেক জিনিস খুঁজে থাকেন চাকরির ইন্টারভিউতে উপস্থিত একজন ক্যান্ডিডেট এর মধ্যে। তারা শুধু অভিজ্ঞ লোকদেরই খুঁজেন না, বরং তারা এমন কাউকে চাকরিতে নিয়োগ দিতে আগ্রহী, যে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তা, অধীনস্থ কর্মচারী এবং সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে এডজাস্ট করে চলতে পারবে কি না সে বিষয়ের প্রতিও খেয়াল রাখেন।


জব ইন্টারভিউতে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়াও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ইন্টারভিউয়ার যে বিষয়টি আপনার মাঝে লক্ষ্য করে থাকেন সেটি হচ্ছে আপনার আচরণ ভঙ্গি। চাকরির ইন্টারভিউতে উপস্থিত হয়ে আপনি কেমন আচরণ করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার চাকরির ইন্টারভিউ এর ফলাফল। 


সুতরাং আজকে আমরা জানবো চাকরির ইন্টারভিউতে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করলে পরবর্তীতে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সহায়তা করবে ইন্টারভিউতে নিজেদের ভালো অবস্থান তৈরি করে নিতে। 


আত্মবিশ্বাস এর বহিঃপ্রকাশঃ

চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে প্রথম যে জিনিস আপনার মাঝে খোঁজা হয় সেটি হচ্ছে আপনার আত্মবিশ্বাস। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই চায় এমন কাউকে চাকরিতে নিয়োগ দিতে যে প্রতিষ্ঠানের যেকোনো দায়িত্ব আত্মবিশ্বাসের সাথে পালন করতে সক্ষম। 


বিভিন্ন কারণে আমরা চাকরির ইন্টারভিউতে উপস্থিত হয়ে কনফিডেন্স হারাতে পারি, আবার বিভিন্ন উপায়ে আমরা চাইলে সেই হারানো কনফিডেন্সকে চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে ধরে রাখতে পারি। কিভাবে চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। 


আপনারা চাইলে  “এখানে” ক্লিক করে সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।


আই কন্ট্রাক্ট মেইনটেইন করাঃ 

আপনি যখন ইন্টারভিউয়ার এর সাথে কথা বলছেন, তখন আপনার চোখের দৃষ্টি কোনদিকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি কথা বলার সময় রুমের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকেন বা আপনার সামনে টেবিলে থাকা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার এবং আপনার ইন্টারভিউয়ার এর মাঝে কমিউনিকেশন খুবই দুর্বল হচ্ছে যা আপনার চাকরি না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করছে । 


বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রতি খেয়াল রাখাঃ 

চাকরির ইন্টারভিউতে শুধু সুন্দর করে কথা বললেই চাকরি হয়না বরং সেইসাথে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজও  ঠিক থাকতে হবে। আপনি  কিভাবে কথা বলছেন, কথা বলার সময় আপনার  হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা, আপনার চোখের ধারা কেমন ইম্প্রেশন দিচ্ছেন সে বিষয়গুলো কিন্তু একটি চাকরির ইন্টারভিউতে খেয়াল রাখা হয়। 


আপনি যখন কথা বলছেন খেয়াল রাখবেন যেন কোন কথা বলার দ্বারা আপনার ওয়েট কমিয়ে দিতে পারে, অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে যে কথাগুলোর দ্বারা ইন্টারভিউয়ার এটা ধারণা করেন যে,  আপনি উনার সাথে ফাজলামি করছেন, তাহলে নিশ্চিত ধরে রাখেন আপনার এই চাকরির ইন্টারভিউ এর ফলাফল শুন্য।


কথা বলার সময় অতিরিক্ত হাত নাড়ানো বা মাথা নাড়ানো এগুলো এড়িয়ে চলবেন। কারণ এগুলো একজন ইন্টারভিউয়ার এর  জন্য সাধারণত বিরক্তিকর জিনিস হিসেবে বিবেচিত। সেইসাথে যাদের কথা বলার মাঝখানে ঠোঁট কামড়ানোর অভ্যাস রয়েছে, তারা অন্ততপক্ষে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় এই ধরনের অভ্যাস এড়িয়ে চলবেন।


আপনার বসার ধরন এমন হওয়া উচিত যেন আপনার হাত দুটি সামনের টেবিলের উপর না থাকে। কারণ এরকম আচরণ অনেকসময় বেয়াদবির মত হয়ে যায়। সেইসাথে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর মুখের দ্বারাই দেওয়ার চেষ্টা করা, কোনভাবেই মুখের পরিবর্তে মাথা নাড়িয়ে ইশারা দিয়ে উত্তর দেওয়া উচিত না।

বুদ্ধিমানরা সর্বদা বুঝেশুনে উত্তর দেয়, যখন তাদের কোন কিছু প্রশ্ন করা হয়। সুতরাং চাকরির ইন্টারভিউতে যখন আপনাকে কোন কিছু প্রশ্ন করা হবে, তখন প্রশ্ন শেষ করার সাথে সাথেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত না। তাড়াহুড়া করে উত্তর দিলে ইন্টারভিউয়ার ধরে নিবে যে আপনি আসলে কিছু জানেন না অথবা জানলেও তা মুখস্ত বিদ্যার জোরে বলছেন। তাই কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে উত্তর দেওয়া শুরু করবেন।

ইন্টারভিউয়ের আগের রাত ভালো করে ঘুমানো উচিত, যাতে ইন্টারভিউয়ের সময় বার বার হাই তুলতে না হয়। যা আপনাকে একজন অলস ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত করবে।

ইন্টারভিউ দিতে গেলে অনেক সময় আমাদের ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে হয়। আপনাদের উচিত যখন আপনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন, তখন কোন কিছু খাওয়া-দাওয়া করা থেকে বিরত থাকা, বিশেষ করে চুইংগাম বা পান ইত্যাদি।

অনেকসময় ইন্টারভিউয়ার ইচ্ছা করে চাকরির জন্য আবেদনকারীদের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখেন। সুতরাং আপনার উচিত যখন আপনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন, তখন আপনার সামনে দিয়ে যে যাবে তার দিকে তাকিয়ে পারলে একটি মুচকি হাসি দেওয়া, অন্যথায় বিরক্তিভাব আসে এমন কোন এক্সপ্রেশন না দেওয়া।

ওয়েটিং রুমে বসা অবস্থায় নিজের মোবাইলে কথা বলা, অনলাইনে চ্যাটিং করা অথবা পাশের জনের সাথে গল্প করা থেকে বিরত থাকুন। হতে পারে আপনাকে কেউ আড়াল থেকে বা সিসি ক্যামেরায় ফলো করছে যা আপনি বুঝতে পারছেন না হয়ত।

যখন আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে, তখন ভালো করে খেয়াল করবেন যে আপনার ড্রেস কোড ঠিক আছে কি না যা উক্ত জবের জন্য উপযোগী। ইন্টারভিউ রুমে ঢুকার সময় অবশ্যই সালাম দেওয়া বা অন্যভাবে অভিবাদন জাননো। সেইসাথে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে বসার কথা না বলা হয়েছে, ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে অথবা অনুমতি নিয়ে বসতে হবে। 

তাছাড়া আরো যে কাজগুলো করলে একজন ইন্টারভিউয়ারকে বিরক্ত করতে পারে বলে মনে করেন তা না করা। 

সিভির সাথে নিজের মিল রাখাঃ 

আমরা অনেকেই চাকরির জন্য তৈরি করা সিভিকে খুব একটা প্রাধান্য দেই না। বেশিরভাগ চাকরির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আপনি যে প্রতিষ্ঠানে  চাকরির জন্য আবেদন করেছেন সেখানে আপনি পৌঁছার আগে আপনার সিভি সেই প্রতিষ্ঠান পৌঁছে যায়। সুতরাং আপনার সিভি রিপ্রেজেন্ট করে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন, আপনার  দক্ষতা  কতটুকু এবং আপনার অভিজ্ঞতা কতটুকু। 

কারণ আমরা যখন কোন কিছু করি, কোন কিছু বলি বা কোন কিছু লিখি, তখন আমরা আমাদের স্টাইলে সেই কাজগুলো করে থাকি, যার মাধ্যমে বুঝা যায় যে, আমার ব্যক্তিত্ব কেমন, আমার রুচি কেমন, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু, এরকম অনেক জিনিস কিন্তু আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

তাই আপনার সিভি আপনি নিজেই তৈরি করা উচিত। আপনি যদি অন্যকে দিয়ে সিভি তৈরি করান, তাহলে সেই  সিভি হবে তার মত যাকে দিয়ে আপনি সিভি তৈরি করেছেন। আবার আপনি যদি সিভি কোন দোকানে গিয়ে তৈরি করেন, তাহলে  সিভি হবে আরো ১০০ জনের মত, কারণ এই সিভি তৈরি করা হয়েছে একটি কমন ফরমেটে যা আরো অনেকেই ইতিমধ্যে ব্যবহার করেছে।

অতএব চাকরির ইন্টারভিউতে উপস্থিত হয়ে আপনি নিজে কি আচরণ করছেন এই বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক একইভাবে আপনার সিভিতে কি লেখা আছে বা সিভিকে কিভাবে সাজানো হয়েছে সেই বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, জেনে নেই একটা সিভি সাধারণত কি রকম হওয়া উচিত। 

আপনার সিভি হবে সংক্ষিপ্ত কিন্তু সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত। আপনার  আপনার সিভিকে চেষ্টা করবেন ০২ পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করতে যদি সম্ভব হয়। সর্বোচ্চ ০৩ পৃষ্ঠার বেশি যেন আপনার সিভি না হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতার কারণে ইন্টারভিউয়ার আপনার সিভির সব পৃষ্ঠা ভালো করে পড়তে চাইবেন না এবং তাতে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্কিপ করে যেতে হবে। 

সিভির ভাষা যেন খুব ন্যারেটিভ না হয়, অর্থাৎ আপনি যখন আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ অথবা ইন্ট্রোডাকশন লিখছেন, তখন খুব লম্বা বাক্যে বিষয়টি না লিখে সংক্ষিপ্ত আকারে শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরবেন। সেই সাথে সিভিতে বানানের ভুল এবং ব্যাকরণের ভুল আছে কিনা সে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

অহেতুক কোন ইনফরমেশন দিয়ে সিভিকে ওভারলোড করে লাভ নেই। আপনি কি পছন্দ করেন বা কি পছন্দ করেন না অর্থাৎ আপনার হবি সিভিতে উল্লেখ করার দরকার নেই।  সবচেয়ে ভালো হবে আপনি এসবের পরিবর্তে যদি কোন ট্রেনিং বা কোন কাজ শিখার জন্য কোন ওয়ার্কশপ করেছেন কি না সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে পারেন। 

আপনি যখন আপনার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা বা কাজের হিস্টরি সিভিতে লিখছেন, তখন তারিখের সিকুয়েন্সের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আপনি কোন তারিখে একটি কোম্পানিতে জয়েন করেছেন, কোন তারিখে একটি কোম্পানি থেকে চাকরি ছেড়েছেন, আবার কোন তারিখে আপনি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছেন, এইসব বিষয় গুলো যেন  সিকুয়েন্সিয়াল হয়। 

কোন কারণে আপনার কর্ম জীবনে কিছুদিন বেকার থাকেন, তাহলে সেই বিষয়গুলো একজন ইন্টারভিউয়ার সন্দেহের চোখে দেখবেন। তখন আপনার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সুতরাং আপনার কর্মজীবনে যদি কোন গ্যাপ থাকে, তাহলে তার জন্য যৌক্তিক উত্তর আগে থেকেই মনে মনে চিন্তা করে রাখবেন, যাতে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইন্টারভিউয়ার আপনার উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হন। 

সিভিকে খুব আকর্ষণীয় করার জন্য সিভির মধ্যে কোন ধরণের গ্রাফিক্সের কাজ করা যাবে না অথবা কোন ধরনের ফেন্সি ফন্ট ব্যবহার করা যাবে না। সেইসাথে সিভির মধ্যে অহেতুক কোন ছবি যুক্ত করা যাবে না। 

আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন, সেই চাকরির জন্য যেসব ইনফরমেশন গুলো প্রদান করা প্রয়োজন, সেগুলো লুকানো যাবে না আবার ভুল তথ্য দিয়ে চাকরি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা যাবে না। 

এভাবে আপনার নিজের মধ্যে বাস্তবে যে গুণাবলী রয়েছে, সেগুলোর সাথে সিভিতে প্রদত্ত তথ্যের সাথে মিল থাকতে হবে। সেই সাথে সিভি লেখার ধরন এমন হওয়া উচিত যেন আপনার ব্যক্তিত্বকে বা আপনার আচরণকে সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।  

অতএব আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আমরা জানতে পারলাম যে, আমাদের কথা বলার ধরন,  আমাদের চলাফেরার ধরন, সেই সাথে আমাদের সিভি লেখার ধরন, মূলত এসব গুলো সমষ্টিগতভাবে আমাদের আচরণকেই রিপ্রেজেন্ট করে। 

আচরণের মাধ্যমে যদি আপনি যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা জব ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। মনে রাখবেন যে, অনেক মেধাবী এবং পরিশ্রমী লোক রয়েছে যারা শুধু ভালো আচরণের অভাবেই চাকরি হারাচ্ছে অথবা চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছে। 

আজকের এই আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে, তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। সেই সাথে এরকম আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটকে ইমেইলের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করতে পারেন।  


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url