ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয়, কিভাবে করা হয় এবং ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন খরচ কত?

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি সম্পর্কে লেখা আজকের এই মূল্যবান আর্টিকেল পড়ে আমাদের পাঠকগণ যে যে প্রশ্নের উত্তর জেনে উপকৃত হবেন তা নিম্নরূপঃ

  • ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন কি?
  • ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয়?
  • ল্যাপারোস্কপি কিভাবে করা হয়?
  • ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন খরচ কত?
  • ল্যাপারোস্কপিক সার্জন বাংলাদেশ এর মধ্যে কারা?
আপনাদের সুবিধার্থে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর নিম্নে পৃথকভাবে প্রদান করা হয়েছে। অতএব, আজকের এই আর্টিকেল থেকে পরিপূর্ণ উপকার পেতে আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন কি?

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি হলো অস্ত্রোপচারের আধুনিক একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সাধারণত রোগীর পেটের উপরিভাগে ছোট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের বিভিন্ন অস্ত্রোপচার সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

প্রথাগত অপারেশনের তুলনায় ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি পদ্ধতি বর্তমানে সবার কাছে একটি ন্যূনতম কষ্টদায়ক অপারেশন হিসাবেও পরিচিত। অপারেশন সম্পাদন করার সময় “ল্যাপারোস্কোপ” নামক বিশেষ একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে এই পদ্ধতির নামকরণ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা হয়েছে।

ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয়?

ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয় তার একটি সম্ভাব্য কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো। রোগীর অবস্থা, রোগের জটিলতা এবং নানা দিক বিবেচনা করে একজন চিকিৎসক ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবেন, তাই আমরা নিম্নোক্ত কারণগুলোকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করছি।

  • পেট বা তলপেটের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করার জন্য, যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক পেইন, একটোপিক প্রেগন্যান্সি এবং টিউমার এর মত রোগ সনাক্ত করতে ল্যাপারোস্কোপি করা যেতে পারে।
  • ল্যাপারোস্কোপি প্রায়শই ঐসব চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় যেগুলির জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, যেমন পিত্তথলি অপসারণ, অ্যাপেনডেক্টমি, হার্নিয়া, লিভার সার্জারি, হিস্টেরেক্টমি ইত্যাদি।
  • ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি যেহেতু প্রথাগত ওপেন সার্জারির তুলনায় কম কষ্টদায়ক অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, সেহেতু যখন কোন রোগীর দ্রুত নিরাময়, কম অস্বস্তি, শরীরে তুলনামূলক কম কাটাছেঁড়ার দাগ এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো প্রয়োজন তখন এই সার্জারি করা যেতে পারে।

ল্যাপারোস্কপি কিভাবে করা হয়?

ল্যাপারোস্কপিক-কি, বাংলাদেশে-ল্যাপারোস্কপিক-অপারেশন-খরচ-কত, ল্যাপারোস্কপিক-অপারেশন-খরচ-বাংলাদেশ, ল্যাপারোস্কপি-কেন-করা-হয়, ল্যাপারোস্কপিক-অপারেশন-খরচ, ল্যাপারোস্কপি-কিভাবে-করা-হয়, ল্যাপারোস্কপিক-সার্জন-বাংলাদেশ, ল্যাপারোস্কপিক-অপারেশন-কি

ল্যাপারোস্কোপি কিভাবে করা হয়
তার একটি সাধারণ ওভারভিউ এখানে দেওয়া হল। তবে, রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে আরো কয়েকটি ধাপ জড়িত থাকতে পারে।

ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করার পুর্বে প্রথমে রোগীকে সাধারণ অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়, যাতে রোগীকে অজ্ঞান করে ব্যথা অনুভব করতে অক্ষম করা যায়।

তারপর, সার্জন রোগীর পেটে একটি ছোট ছিদ্র করে থাকেন যা সাধারণত আধা ইঞ্চির চেয়েও ছোট ছিদ্র হয়ে থাকে।

ছিদ্র করা হয়ে গেলে সার্জন তখন রোগীর পেটে একটি ল্যাপারোস্কোপ প্রবেশ করাবেন। ল্যাপারোস্কোপ যেহেতু একটি পাতলা টিউব যার এক প্রান্তে একটি লাইট এবং ক্যামেরা থাকে, সেহেতু ল্যাপারোস্কোপ যন্ত্রের দ্বারা সার্জন রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি মনিটরে দেখতে পান।

তারপর রোগীর পেটে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস প্রবেশ করানো হয় যাতে রোগীর পেট ফুলে উঠে এবং সার্জন উনার কাজ করার জন্য রোগীর পেটের ভিতরের অঙ্গ ভালো করে দেখতে পান।

এবার পেটের ভিতরে অস্ত্রোপচারের যন্ত্র, যেমনঃ কাঁচি, গ্রাসপার, ইলেক্ট্রোকাউটারি ইত্যাদি  প্রবেশ করানোর জন্য সার্জন অতিরিক্ত এক থেকে তিনটি ছেদ করবেন।

এভাবে একজন সার্জন রোগীর পেটের ভিতরের টিস্যু অপসারণ, অঙ্গ মেরামত করা, বায়োপসি করা অর্থাৎ রোগ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার সম্পাদন করার জন্য সার্জিক্যাল যন্ত্রগুলি ব্যবহার করেন।

অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, রোগীর ভিতর থেকে সার্জিক্যাল যন্ত্রগুলি সরানো হয় এবং রোগীর পেট থেকে গ্যাস নির্গত করা হয়। অবশেষে, ছিদ্রগুলি সেলাই বা অস্ত্রোপচারের টেপ দিয়ে বন্ধ করা হয় এবং রোগীকে অপারেশনে থিয়েটার থেকে বাহির করে আলাদা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশে ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন খরচ কত?

ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন খরচ সাধারণত রোগের ধরন, রোগের জটিলতা, এবং হাসপাতালের চিকিৎসার মানের উপর নির্ভর করে ৩৫,০০০ টাকা হতে ২০০,০০০ টাকা বা আরো বেশিও হতে পারে।

বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের অপারেশন খরচ সর্বনিম্ন হয়ে থাকে এবং বেসরকারি হাসপাতালের ইহার খরচ লক্ষাধিক টাকা হবে।

তবে, এখানে জানা উচিত যে, ল্যাপারোস্কোপি একটি আধুনিক এবং জনপ্রিয় সার্জারি পদ্ধতি হলেও রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে একজন চিকিৎসক প্রথাগত ওপেন সার্জারি করার পরামর্শ দিতে পারেন।

সরকারি হাসপাতাল থেকে কম খরচে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করাতে চাইলে নিম্নে প্রদত্ত চিকিৎসকদের সম্পর্কে ভালোভাবে খবর নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গোপনীয় প্রশ্নোত্তরসহ ডিএনসি কিভাবে করা হয় তা নিয়ে আলোচনা।

ল্যাপারোস্কপিক সার্জন বাংলাদেশ তালিকাঃ

ডঃ মোঃ শরীফুল আলম (জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপি সার্জন, সহকারী অধ্যাপক-সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা)।

ডঃ মুহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন খান (সহকারী অধ্যাপক-সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা)।

ডঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাতুব্বর (অধ্যাপক-সার্জারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা)।

ডঃ আহমাদ সামি আল হাসান (সহকারী অধ্যাপক-জেনারেল সার্জারি, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট হাসপাতাল, ঢাকা)।

ডঃ হাসনা হোসাইন আঁখি (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা)।

ডঃ তনিমা আহমেদ তনু (স্তন ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ সার্জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা)।

ডঃ মীরা পারভিন (ব্রেস্ট, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জারী বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা)।

আমাদের প্রিয় পাঠকদের জন্য ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি ব্যপারে পরামর্শঃ

আমাদের ওয়েবসাইট থেকে কোন চিকিৎসক বা সার্জনকে রেফার করা যাচ্ছে না। আমরা শুধু আমাদের পাঠকদের ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করার ব্যপারে প্রাথমিক তথ্য প্রদান করার জন্য কয়েকজন পুরুষ এবং কয়েকজন মহিলা চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করেছি। 

সার্জারি কোন হাসপাতালে করাবেন এবং কোন সার্জন দ্বারা করাবেন তা একমাত্র আপনাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। আমাদের সম্মানিত পাঠকদের সবার প্রতি পরামর্শ রইলো যে, যাকে দিয়েই আপনার সার্জারি করান না কেনো প্রথমে তার অতিত অভিজ্ঞতা যাচাই করুন।

যাদি সম্ভব হয় তাহলে আরো কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে তার ব্যপারে খবর নিন এবং সার্জনের ব্যপারে সকল তথ্য আপনার কাছে ইতিবাচক মনে হলে উনার মাধ্যমে সার্জারি করাতে পারেন।

আশাকরছি, এই আর্টিকেল পড়ে আপনি খুব সহজ ভাষায় জানতে পেরেছেন যে, ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশন কি, ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয়, ল্যাপারোস্কপি কিভাবে করা হয় এবং বাংলাদেশে ল্যাপারোস্কপিক অপারেশন খরচ কত হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url