হাঁটুর ব্যথা সারানোর জন্য ঘরোয়া এই ০৩ টি উপায় যথেষ্ট।
হাঁটুর ব্যথা নিয়ে প্রারম্ভিক কিছু কথাঃ
হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় খুঁজার পূর্বে আপনার জানা উচিত যে, চিকিৎসকদের মতে হাঁটুর ব্যথার রোগ একটি খুব কমন একটি রোগ। সুতরাং, আপনি শুধু একা ব্যক্তি নন যার হাঁটুর ব্যথা জনিত সমস্যা রয়েছে।
বিভিন্ন কারণে হাঁটুর ব্যথার রোগ আপনার মাঝে দেখা দিতে পারে। তবে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র জানার চেষ্টা করবো হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় সম্পর্কে এবং কোন কারণে বা কিভাবে আপনার হাঁটুর ব্যথার রোগ হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করবো না, যেহেতু একই রোগের জন্য একেক রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম কারণ থাকতে পারে।
রোগের কারণ যাই হোক, আপনার জন্য সুসংবাদ হচ্ছে যে, হাঁটুর ব্যথা সারানোর জন্য হাই পাওয়ারের মেডিসিন নয়, বরং নিম্নে বর্ণিত হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই আপনার হাঁটুর ব্যথার রোগ অনেকাংশে কম অনুভব করবেন।
ইউরিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করাঃ
হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় যাই অনুসরণ করেন না কেনো, যতদিনই অনুসরণ করেন না কেনো রোগের জন্ম যদি আপনার মাঝে ধারাবাহিকভাবে হতেই থাকে, তাহলে একদিকে রোগ নিয়ন্ত্রণ করবেন আর অন্যদিকে রোগের জন্ম হতে থাকবে।
তাই সবার আগে নিজের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। যেসব খাবারে ইউরিক এসিড রয়েছে, সেগুলো এখন থেকে আস্তে আস্তে কমানো শুরু করতে হবে।
শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণের ইউরিক এসিডের তৈরির মাধ্যমে সাধারণত আর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর ব্যথা জনিত রোগ হয়ে থাকে। যেসব খাবারের মধ্যে ইউরিক এসিড বিদ্যমান থাকে তাহলোঃ
- সামুদ্রিক মাছ, যেমনঃ বাগদা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, স্যালমন, সার্ডিন ইত্যাদি।
- লাল মাংস, যেমনঃ গরুর মাংস, মহিষের মাংস, ছাগলের মাংস এবং বিশেষ করে লিভার (যকৃৎ) অঙ্গ জাতীয় মাংস।
- এলকোহল জাতীয় খাবার, যেমনঃ মদ, বিয়ার ইত্যাদি।
- হাই পিউরিনযুক্ত সবজি, যেমনঃ সিম, পালং শাক, ফুলকপি, মাশরুম, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
হাঁটুর উপর চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখাঃ
হাঁটা চলাফেরা করার সময় আমাদের শরীরের ওজন হাঁটুর উপরেই গিয়ে চাপ তৈরি করে। তাই হাঁটুর উপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং সেইসাথে হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য শরীরের ওজনও কমানো প্রয়োজন।
তাছাড়া, হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করার অর্থ এই নয় যে, আপনি ঘরে শুধু বসে বসেই হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনি যদি সারাদিন বিশ্রামে থাকেন এবং কোন পরিশ্রম না করেন, তাহলে আপনার হাঁটুর জোড়ার চারপাশে থাকা পেশীগুলো এমনকি আপনার শরীরের অন্যান্য পেশীগুলোও আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়বে।
হাঁটুর এই পেশীগুলো ক্রমাগত দুর্বল হওয়ার কারণে শরীরের পুরো চাপটাই হাঁটুর জয়েন্ট একাই বহন করে থাকে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করার মাধ্যমে হাঁটুর জোড়ার চারপাশে থাকা পেশীগুলো আস্তে আস্তে শক্তিশালী হতে থাকবে এবং হাঁটুর জোড়ার কিছুটা চাপ পেশীগুলো বহন করতে পারবে।
ব্যায়াম হিসেবে আপনি বাইসাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, নরমাল হাঁটা অথবা কার্ডিও এক্সারসাইজ করতে পারেন।
রেজিমেনাল থেরাপিঃ
হাঁটুর ব্যথা সারানোর অনেক প্রাচীন একটি পদ্ধতি হচ্ছে রেজিমেনাল থেরাপি। রেজিমেনাল থেরাপি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা সাধারণত ম্যাসেজ করা, শরীরচর্চা করা এবং লীচিং ইত্যাদিকে বুঝানো হয়ে থাকে।
প্রাচীন চীন, মিশর এবং আরবদের মাঝে এই পদ্ধতিটি বেশ প্রচলিত ছিলো। তবে, রেজিমেনাল থেরাপির মধ্যে বর্তমানে কাপিং বা হিজামা অনেক জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১৩ সালে প্রকাশিত “এডভান্স ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি এন্ড রিসার্স” নামক একটি জার্নালে বলা হয়েছে যে, হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় বা আর্থ্রাইটিস সারানোর জন্য হিজামা অনেক কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে।
উক্ত জার্নালে এটাও বলা হয়েছে যে, হিজামা শুধুমাত্র শরীরের পেশীর রক্ত সঞ্চলনই বৃদ্ধি করে না বরং তা পেশীর জন্য ভালো একটি ব্যায়ামও বটে।
হিজামা আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমনঃ ড্রাই হিজামা, ওয়েট হিজামা ইত্যাদি। হিজামা থেরাপি অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে নেওয়া উচিত, যাতে অসতর্কতা জনিত কারণে কোন ধরনের স্কিন ইনফেকশন না হয়।
আরো পড়ুনঃ ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয় এবং বাংলাদেশে ইহার খরচ কত?
আমাদের মন্তব্যঃ
হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় আরো অনেক রয়েছে, কিন্তু আমরা শুধুমাত্র এই তিনটি উপায়ের কথাই বলেছি। কারণ, একটি রোগ হওয়ার পিছনে যেমন যুক্তিসঙ্গত এক বা একধিক কারণ রয়েছে, ঠিক তেমনি একটি রোগ থেকে মুক্তির জন্যও যুক্তিসঙ্গত উপায় অবলম্বন করা উচিত।
খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে, আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় হিসেবে নিম্নোক্ত যুক্তি অবলম্বন করেছিঃ
- হাঁটুর ব্যথা রোগের উৎসে নিয়ন্ত্রন।
- হাঁটুর উপর চাপ নিয়ন্ত্রণ।
- হাঁটুর রিলাক্সেশনের জন্য রক্ত সঞ্চলন।
আশা করছি হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কৃত আমাদের দেওয়া পরামর্শগুলো আপনাদের জন্য ফলপ্রসূ হিসেবে প্রমাণিত হবে।
ট্যাগঃ বাত রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, হাঁটুর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা, হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায়, হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায়।