সফল জীবনের ৬টি লক্ষণ যা আমরা সাধারণত খেয়াল করি না।। Bengal Nawab Presents Six Indicators to Measure Your Success
সফল জীবনের ৬টি লক্ষণ যা আমরা সাধারণত খেয়াল করি না।। Bengal Nawab Presents Six Indicators to Measure Your Success
সফলতা অর্জনের উপায় অনেক থাকলেও সফলতা মাপার উপায় খুঁজে বাহির করা সাধারণত অনেক কঠিন। আমরা যখন সফলতা অর্জন করতে গিয়ে ব্যর্থ হই, তখন আমাদের ব্যর্থতা খুব সহজেই আমাদের সবার চোখের সামনে ধরা পড়ে। কিন্তু আপনি বর্তমানে কতটুকু সফলতা অর্জন করেছেন তা হিসাব করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয় না।
আজকে এই আর্টিকেলে আমরা ০৬ টি লক্ষণ সম্পর্কে জানবো, যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারবো আমরা কি আসলে সফল না কি আমাদের সফলতা পেতে এখনো অনেক বাকি রয়েছে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ
অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করা খুব সহজ ব্যাপার না। আপনি যদি আপনার নিজের খরচ চালাতে সক্ষম হন অথবা আপনি যদি আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে সাপোর্ট দিতে সক্ষম হন, তাহলে বুঝতে হবে এটা আপনার জন্য অনেক বড় একটি সফলতা বা অনেক বড় একটি অর্জন।
অনেকে রয়েছে যারা তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নন। আপনি যদি অন্ততপক্ষে আপনার নিজেকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাখেন, তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে যে আপনি বাকি অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো করছেন বা সফলতা পেয়েছেন।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা সর্বদা নিজেদের এমন কিছু ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করি যারা হয়তো বিগত কয়েক দশক পরিশ্রম করে ইতিমধ্যে সফলতা পেয়েছেন। তাদের সাথে যখন আমরা নিজেদের তুলনা করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সফলতাকে ছোট মনে হয় বা আমাদের সফলতা সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়।
সুতরাং এরকম ব্যক্তিদের সাথে আমাদের তুলনা করে আমরা কিন্তু আমাদের সফলতা মাপতে সক্ষম হবো না। আমরা তাদের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের দিকে তাকাতে হবে যে, আমরা কি অন্ততপক্ষে আমাদের নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাপোর্ট দিতে সক্ষম কি না। যদি উত্তর হ্যাঁ বোধক হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি ইতিমধ্যে সফলতা পেয়ে গিয়েছেন যা ভবিষ্যতে আরো বর্ধিত হতে থাকবে।
প্রতিটি কাজ উপভোগ করাঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা চাকরি করেন, অথচ সেই চাকরি করাকে উপভোগ করেন না। আবার অনেকে রয়েছেন ব্যবসা করেন, অথচ সেই ব্যবসাকে নিজেরাই উপভোগ করেন না। কিন্তু আপনি যে কাজটি করছেন, সেই কাজটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা সেই কাজটি করতে আপনি উপভোগ করেন তাহলে ধরে নিতে হবে এটা আপনার জন্য সফলতার বড় একটি লক্ষণ।
আমরা সর্বদা কিভাবে সফলতা অর্জন করতে হয়, সফলতা অর্জনের উপায়, জীবনে সফল হওয়ার উপায় এইসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করে থাকি। কিন্তু আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন, আপনি যে কাজটি করতে উপভোগ করেন না সেই কাজ করে আপনি কিভাবে সফলতা অর্জন করবেন,যদিও এই কাজ করে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ সফলতা পেয়েছেন।
সুতরাং আপনার সফলতা অর্জনের উপায় হচ্ছে আপনি কোন কাজটি করতে ভালো লাগে, সেই কাজটি খুঁজে বাহির করা। আর যদি আপনি বর্তমানে যে কাজটি করছেন, সেই কাজটি আপনার কাছে উপভোগ্য মনে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনি সফলতার পথেই হাঁটছেন।
কারণ জীবনে পূর্ণ সফলতা পেতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়, আর সেই পর্যন্ত অপেক্ষা তখনই করা সম্ভব হয়, যখন আপনি যে কাজ বর্তমানে করছেন সেই কাজটি উপভোগ করছেন।
নিজের চাহিদা সম্পর্কে জানাঃ
বর্তমানে সমাজের কারণে হউক আর আশেপাশের বিভিন্ন ট্রেন্ড এর কারণে হউক, আমরা আমাদের চাহিদা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে খেয়াল রাখি না অথবা বুঝতে পারিনা। আমাদের নিজেদের মন থেকে যে চাহিদা তৈরি হয় বা আমার মন যে জিনিসটি চায়, সে জিনিসের প্রতি খেয়াল না রেখে আমরা সর্বদা খেয়াল রাখি পাশের বাড়ির লোক কোন ব্র্যান্ড ব্যবহার করে, কি কেনাকাটা করে, কি পছন্দ করে বা কি অপছন্দ করে ইত্যাদি।
মনে রাখা উচিত প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে এবং সেই বৈশিষ্ট্যই তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি বুঝতে পারেন আসলেই আপনার মন কি চায় বা কি করা উচিত, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি আপনার জীবনে কোন কিছু সিলেকশন এর ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা অন্যকারো দ্বারা বা অন্যকিছু দ্বারা বায়াসড হচ্ছে না। আর এই গুণটি আপনাকে সফলতা এনে দিতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
নিজের জন্য কি অপ্রয়োজনীয় তা বুঝতে পারাঃ
আপনার নিজের জন্য কি করা দরকার নয়, কোন জিনিস দরকার নয়, কাদের সঙ্গ দরকার নয় অথবা কোন সময় কোন কাজ করা দরকার নয় এরকম বিষয়গুলো যদি আপনার কাছে সুস্পষ্ট হয়,তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনি সফলতা অর্জনের পথে হাঁটছেন।
কারণ আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আমার এখন এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত, এই ফ্রেন্ডের সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত বা এই সময়ে না ঘুমানো উচিত, তাহলে বুঝতে হবে আপনি আপনার নিজেকে রক্ষা করার জন্য এবং নিজের স্বপ্নকে রক্ষা করার জন্য যতেষ্ট সচেতন।
সুতরাং এভাবে নিজের জন্য যে বিষয়গুলো ক্ষতিকর তা বুঝতে পারা এবং এড়িয়ে চলার গুণাবলী যদি আপনার মাঝে থাকে, তাহলে সফলতা নিজেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
বিনোদনের জন্য বা নিজের জন্য সময় থাকাঃ
অনেকেই আছেন দিনের বেশিরভাগ সময়ে কাজ করতে পছন্দ করেন এবং সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করতে পছন্দ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে কাজ করে কি সফলতা অর্জন করা কি সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, একদমই না।
একটু আগে আমরা জানতে পেরেছি যে, কোন জিনিসটি আমার জন্য ভালো এবং কোন জিনিসটি আমার জন্য মন্দ এই বিষয়গুলো যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে আমরা অবশ্যই সফলতা অর্জন করতে পারব। কিন্তু ব্যাপারটা যদি তার উল্টো হয় অর্থাৎ আমরা যদি আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করতে না পারি, তাহলে একমাত্র তখনই আমরা নিজেদের সারাদিন কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করবো।
কারণ অতিরিক্ত কাজ করা এটা আপনার স্বপ্ন পূরণে বা সফলতা অর্জনের পথে অনেক বড় একটি বাধা। অতিরিক্ত কাজ করার ফলে আপনার প্রডাক্টিভিটি,কর্মদক্ষতা, চিন্তাশক্তি ইত্যাদি আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। যতদিন যাবে আপনি শুধু ব্যস্তই হবেন, কিন্তু সেখান থেকে বাহির হয়ে আলাদা কোন কিছু চিন্তা করার জন্য সময়, সুযোগ এবং নিজের কর্মদক্ষতা তখন আর থাকবে না।
তাই আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার কাজ করার পরও যতেষ্ট সময় বাহির করতে পারেন নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য, পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য, দূরে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য অর্থাৎ এককথায় নিজের মনকে শান্তি দিতে পারে এমন কোন কাজ বা বিনোদনের জন্য, তাহলে আপনি সঠিক পথে আছেন।
কারণ এভাবে নিজের মনের প্রশান্তির জন্য যে সময়টুকু আপনি দিচ্ছেন, তাতে আপনার প্রডাক্টিভিটি কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে, আপনার অনেক স্ট্রেস কমে যাচ্ছে। আর এভাবেই সফলতাকে বলতে গেলে ছিনিয়ে আনার মত মনোবল আপনার মাঝে তৈরি হবে।
আপনার নিজের কি আছে তা বুঝতে পারাঃ
বর্তমানে সফলতা মাপার ভুল একটি মাপকাঠি হচ্ছে ব্যাংক ব্যালেন্স, দামি গাড়ি এবং সুন্দর বাড়ি। আবার অনেকেই আছেন যাদের সবকিছুই আছে তারপরও তারা সফলতা খুঁজে পায় না। এসবের মূল কারণ হচ্ছে, আমরা সফলতাকে ভুলভাবে চিন্তা করি, ভুলভাবে মাপি এবং সুযোগ পেলে বড় কোন বিলিয়নিয়ার এর সাথে নিজের অর্জন বা সফলতাকে তুলনা করি।
আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের যা আছে তা আগে চিনতে পারা বা বুঝতে পারা। আমার চিন্তা করতে হবে আমার গত দুই বছর আগে কি ছিলো আর এখন কি আছে। আবার এই সময়ের ব্যবধানে আমাদের যে অর্জন তা আবার শুধু টাকার পাল্লায় হিসেবে করলে হবে না।
আমার যদি কোন ভালো একজন মানুষের সাথে পরিচয় হয় যার সাপোর্ট পেলে আমি কোন কিছু করতে পারবো বলে মনে হয়, তাহলে এটা আমার একটা সফলতা। কারণ উনি আমার সফলতার একটি সম্ভাব্য মাধ্যম।
এভাবে আপনি মনে করেন যে, নতুন কোন কিছু শিখেছেন যা আগে পারতেন না, তাহলে এটাও একটি আপনার সফলতা। এরকম টাকা পয়শা ছাড়াও অনেক জিনিস রয়েছে যা আমাদের অন্যান্য লোকদের চেয়ে নিজেদের একটু সফলতার দিকে এগিয়ে রাখতে সক্ষম।
সুতরাং বস্তুগত এবং অবস্তুগত যে জিনিসগুলো আপনার আছে তা সঠিকভাবে যদি আপনি চিনতে পারেন তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনি সফলতা পেয়েছেন। কারণ এরকম সঠিকভাবে চিন্তা করলে আপনার উন্নতি ছাড়া অবনতি চোখে পড়বে না যদি আপনি সত্যিই একজন অলস না হন।
আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা হয়তো এতক্ষণে ধারণা করতে পেরেছেন যে আপনি অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিভিন্নভাবে সফলতা পেয়েছেন যা হয়তো আপনি আগে কখনো চিন্তা করেননি। কারণ আপনি এতদিন নিজেকে তুলনা করেছেন বিল গেটস এর সাথে, স্টিভ জবস এর সাথে, তাই নিজের ছোট ছোট সফলতাগুলো আপনার চোখে পড়েনি।
আপনার আজকের সফলতা যোগ হবে আগামী দিনের সফলতার সাথে, এই মাসের সফলতা যোগ হবে আগামী মাসের সফলতার সাথে এবং এই বছরের সফলতা যোগ হবে আগামী বছরের সফলতার সাথে। এভাবে আপনার ছোট ছোট সফলতাগুলো একদিন বিশালাকার সফলতায় রূপ নিবে, যখন মানুষের কাছে তা চোখে পড়ার মতো হবে।
তখন আপনি আপনার সফলতাকে দেখে নিজেই হয়তো অবাক হবেন। মানুষ তখন আপনাকে ফলো করা শুরু করবে এবং আপনাকে ফলো করে সফল হওয়ার চেষ্টা করবে যদিও এই পদ্ধতি একদম ভুল যা আমরা ইতিমধ্যে এই আর্টিকেলে পড়েছি। কারণ প্রতিটি মানুষ সফল হয় তার নিজের আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে, বিল গেটস বা স্টিভ জবসের বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়।
আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। সেইসাথে এরকম আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটকে ইমেইলের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এবং আমাদের ফেইসবুক পেইজ ফলো করে রাখতে পারেন।